ছেলেদের স্তন বড় হওয়ার কারণ ও চিকিৎসা

পুরুষদের ব্রেস্ট গ্যান্ড বড় হওয়াকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে গাইনেকোমাস্টিয়া বলে। শরীরের বিশেষ দুটি হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেলে এ অবস্থা হতে পারে। তবে যদি শুধু চর্বি জমার কারণে স্তন বড় হয়ে থাকে, তা হলে তা গাইনেকোমাস্টিয়া নয়। তখন তা পরিচিত হয় সিউডোগাইনেকোমাস্টিয়া নামে।

ছেলেদের স্তন বড় হওয়ার কারণ ও চিকিৎসা

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ’য়ের তথ্য মতে, পুরুষের স্তন বৃদ্ধি পাওয়ার কারণটা সাধারণত ‘ইস্ট্রোজেন’ হরমোনের মাত্রা বেড়ে যাওয়া কিংবা ‘টেস্টোস্টেরন’ হরমোনের মাত্রা কমে যাওয়া।  এই সমস্যা যে কোনো বয়সেই হতে পারে।

আর্টিকেলে সূচিপত্রঃ

এখন আমরা গাইনিকোমাস্টিয়া হওয়ার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কারণ জেনে নেবঃ

০১. এটি সাধারণত হয় ইস্টোজন হরমোন এবং অ্যানড্রোজেন হরমোন রেশিওটা যদি বেড়ে যায়। মানে তুলনামূলকভাবে অ্যানড্রোজেন হরমোন এর তুলনায় ইস্ট্রোজেন হরমোন অর্থাৎ মেয়েদের হরমোন যদি বৃদ্ধি পায় তবে এটি আমরা দেখতে পাই।

০২. কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেও এটি হতে পারে যেটাকে আমরা ফিজিওলিক্যাল গাইনিকোমাস্টিয়া বলি।  ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে এটা দেখা যায়। কারণ ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে তারা যখন মায়ের পেটে থাকে  তখন মায়ের শরীর থেকে এমনিতেই ইস্টোজন প্রবেশ করে যেটা নরমাল এবং বয়সের সাথে সাথে এটা চলে যায়। 

আরো পড়ুনঃ স্তন ক্যান্সারের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে নিন বিস্তারিত

০৩. কিছু কিছু ক্ষেত্রে বয়সন্ধি সময় এটি দেখা যায়। এটিও  বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঠিক হয়ে যাই।আর যারা এডাল বা বড় হয়ে গেছেন তাদের যদি এরকম দেখা যায়। তাহলে এটা সাধারণত অন্য কোন রোগকে প্রকাশ করতে পারে। 

০৪. বয়সন্ধিকালে যে সকল পরিবর্তনগুলো আসে পরিবর্তনগুলো না আসতে পারে।মেধাবিকাশে সমস্যা থাকতে পারে,হার্টের সমস্যা থাকতে পার, তাদের উচ্চতার সাধারণত বেশি হয়। এবং তাদের স্বভাব অনেকটা মেইলি হতে পারে, তাদেরকে দেখতে অনেকটা মেয়েলি হতে পারে। এগুলো হচ্ছে জেনেটিক বা ক্রোমোজমা রোগ । 

০৫. হরমোনাল রোগ  হরমোনাল কিছু রোগেও গাইনিকোমাস্টিয়া হতে পারে।যেমন কোন কারনে যদি পুরুষদের টেস্টিজে কোন টিউমার হয়  তবে সেখান থেকেও ইস্ট্রোজেন তৈরি হতে পারে । বার একটি হরমোন তৈরি হতে পারে যেটি এসছি জি এগুলোর কারণেও গাইনোকোম্যাস্টিয়া হতে পারে। 

০৬. কিছু কিছ মানুষের যাদের লিভার নষ্ট হয়ে যায় তাদেরও হতে পারে।কিছু কিছু মানুষের  কিডনি রুগী  । দীর্ঘদিন ধরে কিডনি রোগে ভুগতে ভুগতে একদম লাস্ট স্টেজে চলে এসেছেন এবং ডায়ালাইসিস নিচ্ছেন তাদেরকে তো এটা দেখা যায়। 

আরো পড়ুনঃ আখরোটের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

০৭. যাদের থাইরয়েড হরমোনযুক্ত বেড়ে গেছে তাদেরকে তো দেখা যেতে পারে। কিছু কিছু ক্যান্সার এবং দীর্ঘদিন যাবত ওষুধ খাওয়ার কারণে গাইনিকোম্যস্টিয়া হতে পারে। সুতরাং আপনার দীর্ঘদিন যদি কোন ওষুধ খেয়ে থাকেন, সেটা আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে রিভিউ করে নিবেন। 

এখন জানবো গাইনিকোম্যাস্টিয়া হলে কি কি কষ্ট হয়ঃ

  • সাধারণত তেমন কোন কষ্ট হয় না।তবে কারো কারো ক্ষেত্রে ব্রেস্টটে পেন বা ব্যথা হয়।
  •  নিপেল সেনসিভিটি অনেক  বেড়ে যেতে পারে। 
  • কারো অতিরিক্ত ব্রেস্ট বড় হয়ে গেলে, তার ক্ষেত্রে লো সেলফিমা স্টিমা। 
  • সাইকোলজিকাল অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে।যেমন ডিপ্রেশনে ভুগতে পারে। কনফিডেস কমে যেতে পার। এ ধরনের সমস্যা হয় ।

এখন জানব কিভাবে গাইনিকোমাস্টিয়া ডায়াগনসিস করা হয়ঃ

প্রথমে কোন রোগীর  ইতিহাস বা হিস্ট্রি আমরা পুরা জানা হয়। শুধু গাইনিকোম্যাস্টিয়ায় আছে, না সাথে আরো অন্যান্য কিছু আছে। কারণ একটু আগেই আলোচনা করা হয়েছে এটা হওয়ার  পেছনে অনেক রোগ আছে। সুতরাং ওই ধরনের কোন রোগ আছে কিনা তা পুরাপুরি ভালোভাবে জেনে নেয় ।

আরো পড়ুনঃ কেন কাঁচা রসুন খাওয়া উচিত জেনে নিন বিস্তারিত

রোগীকে ঠিকমতো পরীক্ষ করে।ব্রেস্ট এর আল্ট্রাসনোগ্রাম, মেমোগ্রাফি ইত্যাদি পরীক্ষা করে থাকেন। আর হরমোন লেভেলে যদি ইন ব্যালেন্স হচ্ছে মনে করেন, তাহলে  হরমোন গুলো চেক করে দেখা নেন।এই টেস্টগুলো করার পর যদি কোন অন্তর্নিত কোন  রোগকে চিহ্নিত করতে পারে  বা সন্দেহ করতে পারে তবে সে রোগের জন্য আরো এক্সট্রা টেস্ট করতে হতে পারে। 

এখন বলব ডাক্তারগন গাইনিকোম্যাস্টিয়া হলে কিভাবে চিকিৎসা করেনঃ 

প্রথমত যেগুলো নরমাল কারণে গাইনিকোম্যাস্টিয়া হয়। যেমন আগে আলোচনা করা হয়েছে শিশুদের ক্ষেত্রে বা বয়সন্ধিকালী  হতে পারে এগুলো জাস্ট অবজার করে হয়। এগুলো এমনি সময়ে ভালো হয়ে যেতে পার।

কিছু কিছু পুরুষ আছেন যাদের টেস্টোস্টেরন কম। তাদের টেস্টোস্টেরন দেয়ার ব্যবস্থা করে থাকেন।এছাড়াও আরও কিছু হরমোনাল ট্রিটমেন্ট বা ওষুধ রয়েছে যা তারা দিয়ে থাকেন। ফাইনালী রয়েছে সার্জিক্যাল অপশন।

আরো পড়ুনঃ টেস্টোস্টেরন হরমোন কি? টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায়

 লাইফো সেকশন করে একটা সূক্ষ্ম পাইপের মতো ব্রেস্ট ভেতর প্রবেশ করিয়ে সেখান থেকে ফ্যাট টিস্যু গুলো সাক করে বাইরে নিয়ে যাওয়া  হয়।এরকম একটি কসমেটিক সার্জারি রয়েছ। আর যাদের বেসটা আরো বেশি বড় হয়ে গেছে তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের  ম্যাসটেকটোমি সার্জারি রয়েছে। 

এখন নারী ও পুরুষ উভয় নির্বিশেষে কিছু কথা বলি। সেটা হচ্ছে ব্রেস্টের ভিতর যদি কখনো কোন শক্ত শক্ত চাকার মতো মনে হয় অথবা ব্রেস্ট এর আকৃতি বা প্রকৃতি যদি পরিবর্তিত হয়ে গেছে বলে মনে হয়।অথবা  হঠাৎ করে অকারনে ব্রেস্ট থেকে মিল্ক নিঃসৃত হচ্ছে এমন কিছু মনে হয়, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করবেন ।

 কারণ এই বিষয়গুলো গাইনিকোম্যস্টিয়া না হয়ে অন্যান্য কোন রোগকেও নির্দেশ করতে পারে। এমন কি ক্যান্সার কেউ নির্দেশ করতে পারে। অনেকের ধারণা পুরুষদের বেস্ট  ক্যান্সার হতে পারে না। এটা সম্পূর্ণ ভুল পুরুষদের যেহেতু ব্রেস্ট আছে সেহেতু ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। 

শেষ কথাঃ

এই বিষয়ে যদি আপনি আরো জানতে চান তাহলে আমাদেরকে কমেন্ট করুন। আমাদের পোস্টটি আপনার কাছে ভালো লাগলে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।আজকে তাহলে এখানেই শেষ করা যাক। কথা হবে পরের কোন একটি নতুন আর্টিকেলে নিয়ে।ধন্যবাদ।২০৩

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বন্ধুমহল আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url