সজনে এর বিশেষ গুণাবলী ও সজনের ব্যবহার

আজকে আমরা একটি সুপার ফুড নিয়ে আলোচনা করব। এটা হচ্ছে সজনে পাতা। সজনে পাতা বা সজনে নাম তো আমরা ছোটবেলা থেকেই শুনে শুনে এসেছি বা আমরা প্রতিনিয়ত তা খেয়ে থাকি।আজকে আমরা সজনে পাতার বা সজনের পুষ্টি গুনাগুন ও ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক সম্পর্কে।

সজনে

এক নজরে দেখে নিন

সজনের পুষ্টি

অনেকেই সজনে পাতাকে অলৌকিক পাতা হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। আবার  বিজ্ঞানীরা পুষ্টির দিক দিয়ে সজনে পাতাকে( পুষ্টির ডানামাইট) হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। সজনে পাতাকে অলৌকিক বা পুষ্টির ডানামাইট বলার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে সেগুলো হচ্ছে সজনে এবং সজনের পাতা ,সাজনের শিকড়, ফুল- ফল এগুলোর বিভিন্ন পুষ্টিগুণের কারণে। এটা একটি মাল্টিভিটামিন বৃক্ষ।

আরো পড়ুনঃ লেটুস পাতার ১৫টি উপকারিতা জেনে নিন বিস্তারিত 

সজনে পাতায় আছে প্রায় ৮ রকমের অ্যামাইনো এসিড। যা অন্য কোন উদ্ভিদে নেই।পুষ্টির দিক দিয়ে সজনের কোন জুড়ি নেই  সজনিতে আছে ......ভিটামিন সি, ক্যালসিয়া্‌ ভিটামিন এ ,পটাশিয়াম, আমিষ , ম্যাগনেসিয়াম, চর্বি , শর্করা , খাদ্য আস , আইরন , জিংক , ভিটামিন বি১ , ভিটামিন বি২ দেহের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান থাকে। দক্ষিণ আফ্রিকায় এই গাছকে মায়ের উত্তম বন্ধু বা পুষ্টির সহজলভ্য উৎস হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

আরো পড়ুনঃ আদা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন বিস্তারিত 

১-২  বছর বয়সের শিশুদের ক্ষেত্রে এক চামচ সজনে পাতার গুড়াতে আছে প্রয়োজনীয় ১৪ % আমিষ , ৪০ ক্যালসিয়াম , ২৩ লৌহ এবং ক্যালসিয়াম। প্রতিদিন  যদি কোন গর্ভবতী বা দুগ্ধদানকারী মা ৬ চামচ সজনে পাতার গুঁড়া খাই, তাহলে তাদের প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম ও আয়রনের ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে।

সজনের ঔষধি গুণাবলী

আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রমতে সজনে গাছ প্রায় ৩০০ রকমের রোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করে , বর্তমান বিজ্ঞানীরা এই ধারণাকে সমর্থন করে। সজনের পাতা বেশিরভাগ সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সজনের বাকল , শিকড় , ফুল , ফল , পাতা , বীজ , এর আঠাতেও ঔষধি গুণাবলী রয়েছে।

কোন স্থানে ব্যথা হলে বা ফুলে গেলে সজনে পাতার শিকড় বেটে প্রলেপ দিলে ব্যথা এবং ফোলা সেরে যায়। কানে ব্যথা হলে সজনে পাতা শিকড়ের রস কানে দিলে ব্যথা সেরে যায়। মাথা ব্যাথা হলে সজনের আঠা দুধের সাথে মিশে খেলে মাথা ব্যথা সেরে যায়। হাঁপানি রোগ হলে বা মূত্রথলিতে পাথর হলে দুধের সাথে সজনে ফুলের রস মিশিয়ে খেলে হাঁপানি এবং মূত্রথলির পাথর অপসারণ হয়। ফোড়ার ওপর আঠার প্রলেপ লাগালে ফোড়া ভালো হয়ে যা। অতিরিক্ত গ্যাস করলে সজনে পাতার রসের সাথে লবণ মিশে পান করলে গ্যাস হতে আরাম পাওয়া যায়।

আরো পড়ুনঃ গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ  জেনে নিন বিস্তারিত 

কুকুরে কামড়ালে বা সর্দি -জ্বর হলে সজনে পাতার রস এবং তার সাথে রসুন ,হলুদ , লবণ , এবং গোলমরিচ বেটে সেবন করলে কুকুরের বিষ নষ্ট করেএবং জ্বর সর্দি হতে আরাম পাওয়া যায়।  এবং  সজনে পাতার ফুল সেবন করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়। সজনে পাতার ফুল নিয়মিত দুধের সাথে গ্রহণ করলে যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।

আরো পড়ুনঃ জলপাই খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন বিস্তারিত

সজনে ফল নিয়মিত রান্না করে খেলে গিট বাদ ভালো হয়। সজনে কচি ফল কৃমিনাশক এবং লিভার টনিক হিসেবে কাজ করে। অ্যান্টিসেপটিক হিসাবে সজনে পাতার রস ব্যবহার করা যা। সজনে পাতার রস রক্তের প্রবাহ বৃদ্ধিতে এবং হৃদরোগে চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। সাজনি বীজের তেল শরীরে মালিশ করলে বিভিন্ন রকমের ব্যথা হীনতা  এবং চর্ম রোগের বিশেষ ফল দেয়। ক্ষত সারানোর জন্য সাজনা পাতা বেটে লাগালে দ্রুত সেরে যায়।

প্রোস্টেট সংক্রমণ , শ্বাস-কষ্ট , মাথা ধরা , আর্থাইটিস , চুল পড়া , শরীরের প্রতিষেধক ব্যবস্থা বৃদ্ধি কর , শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ ভারী ধাতু অপসারণ এবং শরীরের রেডিয়েশন কেমোথেরাপি নিতে সহায়তা করে।

সজনে এর ব্যবহার

আমাদের দেশে প্রায় সজনে ফল সবজি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। মসুরের ডাল দিয়ে সজনে ফল আমাদের দেশে বেশি রান্না করা হয় এবং তা খেতে অনেক টেস্টি হয়। লাউ দিয়ে নিরামিষ সাজনি তরকারি রান্না করা হয় সাজনা পাতার পকোড়া বা বড়া তৈরি করা হয়। আমাদের দেশে সজনে পাতার শাক রান্না করে খাওয়া হয়। আলু দিয়ে সজনে , ইলিশ মাছ দিয়ে সজনে , চিংড়ি নারিকেলের সজনি মালাই , আম সজনের ঝোল , সজনে পাতার সবুজ রুটি ইত্যাদি রান্না আমাদের দেশে প্রচলিত আছে।

শেষ কথা

প্রাকৃতিকভাবে কোন কিছু থেকে উপকার পেতে হলে তা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার বা খেতে হয়। দুই- একদিন গ্রহণ করলে তার ভালো ফলাফল পাওয়া যায় না । সজনে গাছের পুষ্টি মান ঔষধি গুণাবলী ও খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করলে স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য আরো ব্যাপকভাবে সজনে ফল টাটকা বা শুকনা পাতা সংগ্রহ করে ব্যবহার বৃদ্ধি করা যায় সারা বছর এই ফল বা সবজি ব্যবহার বাড়ানো উচিত। এতে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এবং বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ থেকে আমরা রক্ষা পাব। এরকম আরো কিছু মজার মজার তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বন্ধুমহল আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url