পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম বা ডিম্বাশয়ে একাধিক ছোট ছোট সিস্ট হলে মেয়েরা কী করবেন?
বন্ধুরা আসুন জেনে নেই পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম বা ডিম্বাশয়ে একাধিক ছোট ছোট সিস্ট হলে মেয়েরা কী করবেন। পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম এখন মহিলাদের কাছে খুবই পরিচিত একটি শব্দ। খাবারে অতিরিক্ত রাসায়নিকের প্রয়োগ, অনিয়মিত জীবনযাপন, স্ট্রেস, হরমোনাল ইমব্যালান্স, শরীরচর্চা না করা এবং আরও নানা কারণে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। বেশিরভাগ মহিলাই প্রথমদিকে এই সমস্যাকে অতটা গুরুত্ব দেন না এবং ফলে পরে গিয়ে এটি বড় আকার ধারণ করে।
ভূমিকাঃ
আজকালকারা দিনে প্রায় বেশিরভাগ মহিলাদেরই অন্যতম সমস্যা 'পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম বা পিসিওএস। বলতে গেলে মহামারীর মতোই এই অসুখ ছড়িয়ে পড়েছে ঘরে ঘরে। ডিম্বাশয়ে একাধিক ছোট ছোট সিস্ট থাকাকেই বলে পিসিওএস বা পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম অথবা পিসিওডি বা পলিসিস্টিক ওভারি ডিজিজ।
পিসিওএস হলে খুব আতঙ্কে ভুগতে হবে তা কিন্তু একেবারেই নয়। বরং সঠিক সময় চিকিৎসা হলে দ্রুত রোগমুক্তি হয়। পলিসিস্টিক ওভারি হয়েছে কিনা,, হলে তার কী কী লক্ষণ দেখা দেবে, কীভাবে চিকিৎসায় দ্রুত সমাধান মিলবে, সে নিয়ে দ্য ওয়ালের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করলেন ক্রেডেল ফার্টিলিটি সেন্টারের গাইনোকলজিস্ট ডক্টর হানি কুরেশি।
আরো পড়ুনঃস্ট্রোকের লক্ষণ ও প্রতিরোধ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম কী? কেন হয়?
আসুন পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম কি, তা কেনো হয় জেনে নেই। আল্ট্রাসনোগ্রাফি করিয়ে এসে বলেন জরায়ুতে সিস্ট হয়েছে। আসলে এটা কোনও সিস্ট বা টিউমার নয়। আসলে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেলে পলিসিস্টিক ওভারি হতে পারে। মেয়েদের শরীরে যখন পুরুষ হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায় তখন ওভারির মধ্যে ছোট ছোট সিস্টের মতো দেখা যায়। পিসিওএস হলে কেউ কেউ কিছুটা মোটা হয়ে যায় এবং শরীরে লোমের পরিমাণ বেশি থাকে।
এক্ষেত্রে মেন্সট্রুয়াল ইরেগুলারিটি থাকে। ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়। প্রথমেই অনিয়মিত পিরিয়ড বা পিরিয়ড একেবারেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যদিও কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রমও ঘটতে পারে। তাছাড়া আরও নানা শারীরিক সমস্যা হতে পারে। আজকাল ১০ জন টিনএজ মেয়ের মধ্যে প্রায় ৬ জনেরই পলিসিস্টিক ওভারি হচ্ছে।
গর্ভধারণে বিভিন্ন পর্যায়ে পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমের প্রভাবঃ
- ওভ্যুলেশনে বাঁধা সৃষ্টি করে বন্ধ্যাত্বের কারণ ঘটায়
- হরমোনের মাত্রায় তারতম্য ঘটায়। স্থুলতার সমস্যায় ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণহীন হতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় বড় ধরণের জটিলতা সৃষ্টি করার ঝুঁকি তৈরি হয়।
- মা এবং শিশুর জন্য দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
- মাতৃস্তন্য থেকে দুধ উৎপাদন ব্যহত হয়।
- পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমের চিকিৎসায় কিছু ওষুধ উপযোগী নয়। এগুলোর ব্যবহারে গর্ভস্থ শিশুর শরীরে চলে আসতে পারে।
টিনএজে অনেক মেয়ে খুব মোটা হয়ে যায়, এর কারণ কী?
এখন বেশিরভাগ কমবয়সী মেয়ের মধ্যেই এই সমস্যা দেখা দেয়। হয় খুব মোটা হয়ে যায়, না হলে সারা মুখে গুটি গুটি ব্রন বের হতে দেখা যায়। মুখে অবাঞ্চিত চুল গজায়। মায়েদের বলতে শোনা যায়, তারা কমবয়সে এমন ছিলেন না, কিন্তু এখন কৈশোরেই চেহারা ভারী হয়ে যাচ্ছে, ওজন বাড়ছে। পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম এই অবস্থার জন্য ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ দায়ী। এর জন্য পিরিয়ড সাইকেলও অনিয়মিত হয়ে যেতে পারে।
এই পিসিওডির জন্যই কি মুখেও ব্রণ, অ্যাকনে এসব সমস্যা হয়?
পিসিওডি-র জন্য ব্রণ এর সমস্যা খুব হয়। কমবয়সী মেয়েদের পলিসিস্টিক ওভারি থাকলে সারা মুখে গুটি গুটি ব্রণ বের হতে দেখা যায়। অনিয়মিত পিরিয়ডস, অবাঞ্ছিত হেয়ার গ্রোথ, অ্যাকনের মতো সমস্যা তো আছেই। শুধু ব্রণ নয়, ফেসিয়াল হেয়ার নিয়েও ক্ষতির মুখে পরে বহু মেয়ে। তাহলে কী করণীয়?
মুখে অবাঞ্চিত লোম নিয়ে মেয়েরা খুব উদ্বেগে থাকেন। অনেকেই ডাক্তারের কাছে যান ব্রণ ও ফেসিয়াল হেয়ারের সমস্যা নিয়ে। মুখে ছেলেদের মতো লোম গজিয়ে উঠলে তা স্বাভাবিকভাবেই চিন্তার কারণ। মেয়েরা বলেন, তাদের বারবার ওয়াক্সিং করতে হচ্ছে বা ছেলেদের মতো সেভ করতে হচ্ছে।
আসলে পলিসিস্টিক ওভারি ডিজিজ হলে মেয়েদের শরীরে পুরুষ হরমোনের মাত্রা বাড়তে থাকে। ফলে ত্বকের ধরনও ছেলেদের মতো কিছুটা হয়ে যায়। তৈলাক্ত ত্বক, থুতনির কাছে বা গালে লোম গজিয়ে ওঠা ইত্যাদি। সেক্ষেত্রে নন-হরমোনাল কিছু ওষুধ দিয়ে ট্রিটমেন্ট করা হয়।
আরো পড়ুনঃ চোখ ভালো রাখার উপায়।
এমন কিছু ওষুধ আছে যেগুলি দিলে হরমোনের ব্যালান্স বজায় থাকে, ফলে অতিরিক্ত ওজন কন্ট্রোলে থাকে, যার ফলে ব্রণ বা ফেসিয়াল হেয়ারের সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল নিয়মের মধ্যে আসে। কমবয়সী মেয়েদের মধ্যে জাঙ্ক ফুড বা প্যাকেটজাত খাবার খাওয়ার প্রবণতা খুব বেশি। সপ্তাহে তিন থেকে চারদিনই বাইরের খাওয়ার খাচ্ছে, বার্গার-পিৎজা বেশি পছন্দ।
পিসিওসের সমস্যা বাড়ে। তাছাড়া এখনকার সেডেন্টারি লাইফস্টাইলে মেয়েদের শরীরচর্চা খুব কম হয় শারীরিক কসরৎ না হওয়ায় ওজন বাড়ে, হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে যেতে থাকে। রাত জাগা, স্লিপ প্যাটার্নে বদল এইসবই এখনকার সেডেন্টারি লাইস্টাইলের জন্য। কিন্তু যদি ডায়েট মেনে চলা যায়, নিয়মিত হাল্কা এক্সারসাইজ এবং জাঙ্ক ফুডের বদলে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস করা যায়, তাহলে পিসিওএসের সমস্যা অনেক কমে যাবে।
পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমে গর্ভধারণ সহায়ক খাবারের টিপস
- সকালে অনেক বেশি এবং রাতে কম খাবেন।
- খাবারে বেশি করে প্রোটিন ও সবুজ শাক-সবজি রাখুন।
- কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট খাব...
- মিষ্টি বা কার্বজাতীয় খাবারে স্বাস্থ্যগুন দেখে নেবেন।
ফার্টিলিটিরও সমস্যা হতে পারে?
❖পিসিওএস থেকে বন্ধ্যত্বের সমস্যা হতে পারে।
❖অনেক সময় পিরিয়ড অনিয়মিত হয়ে যায়।
❖মেয়েদের ওভুলেশন হয় না
ফলে জরায়ুতে ডিম তৈরি হয় না। ফলে ভবিষ্যতে বন্ধ্যত্বের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে কিছু ওষুধ আছে যা দিয়ে ওভুলেশন করানো যেতে পারে। যে মেয়েদের শুধু পলিসিস্টিক ওভারি ডিজিজ আছে, অন্য আর কোনও শারীরিক সমস্যা নেই, তাদের এই ওষুধের থেরাপিতে রাখা যেতে পারে।
আরো পড়ুনঃবাত-ব্যথা রোগের চিকিৎসা ও প্রতিকার
পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমে যে ২/৩টি উপসর্গ থাকবেই।
❖অনিয়মিত মাসিক
অনিয়মিত মাসিক/অথবা সাময়িক মাসিক বন্ধ গর্ভধারণে সমস্যা ।
❖টেস্টোস্টেরনের বৃদ্ধি ঘটবে
শরীরে ও মুখে অতিরিক্ত লোম বা ব্রণ হওয়া।
❖পলিসিস্টিক ওভারিজ
ওভারিতে অস্বাভাবিক সিস্ট।
প্রশ্নঃ এখন অনেক মহিলাই 'পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম' বা (পিসিওএস) রোগে ভুগছেন। রোগটি আসলে কী?
সানজিদা খানম, মিরপুর, ঢাকা
উত্তরঃ অনেক চিকিৎসকই পিসিওএস কে আদৌ রোগ বলতে চান না। বরং বলা ভাল, এটি ওভারি বা ডিম্বাশয়ের টিউমার নয়। নামটিই অনেক কিছু বলে দেয়। এই নামের দু'টি অংশের আলাদা করে মানে করলেই এর সম্পর্কে একটা আন্দাজ পাওয়া যায়। পলি মানে অনেক। আর সিস্টিক মানে হল সিস্ট বা টিউমারের মতো, তবে টিউমার নয়।
প্রফেসর ডা. কামরুন নাহার বেগম
প্রশ্ন: কোন বয়সের মহিলারা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হন?
মমতাজ বেগম, ফতুল্লা, নারায়গঞ্জ
উত্তরঃ নানা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে সাধারণত ১৫ থেকে ৩৫ বছরের মহিলাদের মধ্যে এই রোগের প্রবণতা বেশি থাকে।
ডা. আফরোজ বেগম
প্রশ্ন: পলিসিস্টিক ওভারি রোগ এড়ানোর উপায় কী?
আফসানা আক্তার, চট্টগ্রাম
উত্তরঃ লক্ষণ নিশ্চিত হলে স্বাভাবিক ভাবেই মহিলা ও তাঁর অভিভাবকেরা চিন্তিত হয়ে পড়েন। কিন্তু এটি টিউমার নয়। এক ধরনের শারীরবৃত্তীয় বিপাকীয় পরিবর্তন। তাই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। প্রথমেই জীবনযাত্রার প্রণালী বদলাতে হবে। নজর দিতে হবে মূলত খাবার এবং নিয়মিত ব্যায়ামের দিকে। খাবার কম খাওয়ার দরকার নেই। কিন্তু ক্যালোরির উৎস বদলাতে হবে।
ডা. ইসরাত জাহান ২০৩
শেষকথা
আশা করি পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম কি, তার লক্ষণ, তা কেনো হয় তা ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছেন। এবং এই রোগ থেকে মুক্তির উপায় কি সে সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে। তারপরও যদি আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকে তা জানাতে পারেন। ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন এবং শরীরের যত্ন নিন।
বন্ধুমহল আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url