নবজাতকের যত্নে কুসংস্কার - যে সব ভুলগুলো করবেন না জেনে নিন

বন্ধুরা আজকে আমরা জানবো কিভাবে নবজাতকের যত্নে করণীয় এবং করণীয়জন্মের পর নবজাতকের মাথার চুল পড়ে যাওয়াসহ অনেক প্রচলিত ধারণা ও কুসংস্কার আমাদের দেশে প্রচলিত রয়েছে, যা শিশুর ক্ষতি করে। অনেকে অজান্তেই অন্যের কথার উপর ভিত্তি করে কিছু করে থাকে। তারা বুঝতে পারছেন না ঠিক কী করলে শিশুর সঠিক পরিচর্যা নিশ্চিত হবে।

নবজাতকের যত্নে কুসংস্কার - যে সব ভুলগুলো করবেন না

চলুন জেনে নেওয়া যাক নবজাতকের যত্নে কী কী কাজ করা উচিত এবং কী করা উচিত নয়। নিশাত জাহানের কাছ থেকে।

নবজাতকের মাথার চুল উপড়ে ফেলা উচিত নয়

ডাঃ নিশাত বলেন, অনেকেই জন্মের ছয় দিন পর বা তার আগে চুল প্ল্যাক করেন। এটা করার কোন প্রয়োজন নেই। মাথা ঢেকে রাখে চুল। ফলে চুল পড়ে গেলে ঠান্ডাজনিত কারণে শিশুর হাইপোথার্মিয়া হতে পারে। রেজার মেশিন বা ব্লেড দিয়ে নবজাতকের চুল কাটানোর সময় দুর্ঘটনাজনিত আঘাতও হতে পারে।

এ ছাড়া এক থেকে দেড় বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের মাথার সামনের অংশের হাড় তৈরি হয় না। ওই অংশে শুধু চামড়া থাকে আর তার নিচে থাকে মস্তিষ্ক। ফলস্বরূপ, চাপ সেই এলাকায় আঘাতের কারণ হতে পারে। কিন্তু কেউ যদি মনে করেন বাচ্চার চুল অনেক বড়, তাহলে একটু ছোট করে নিতে পারেন। 10-15 দিন পর আপনি চুল ঝরাতে পারেন যদি শিশুটি কিছুটা স্থিতিশীল থাকে।

জন্মের তিন দিন পর গোসল করুন

জন্মের ৭২ ঘণ্টা পর মানে জন্মের তিন দিন পর নবজাতককে গোসল করাতে হবে। প্রথম তিন দিন শিশুকে গোসল করতে বলা হয় না। কারণ হঠাৎ করে শরীরে পানি দিলে শিশুর ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।

গোসলের সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে শিশুর কানে পানি না যায়। হালকা গরম পানিতে গোসল করুন। যদি কোনো কারণে শিশুর মুখ দিয়ে পানি চলে যায়, তাহলে পেটের সমস্যা না হওয়ার জন্য গোসলের সময় ফুটানো পানি ব্যবহার করতে হবে।

নবজাতককে কাজল দেওয়া উচিত নয়

ডাঃ নিশাত বলেন, জন্মের পর শিশুর চোখে, কপালে, ভ্রুতে বা পায়ে কাজল লাগানো যাবে না। এতে কোনো রাসায়নিক পদার্থ থাকলে সেখান থেকে সংক্রমণ হতে পারে। চোখে কাজল লাগালে চোখের ইনফেকশন হতে পারে। চোখে কাজলের কণা ঢুকলে চোখে পানি, চোখে ময়লা আসে।

নবজাতকের মুখে মধু দেবেন না

জন্মের পর শিশুকে মধু বা মিষ্টি জল দেওয়া উচিত নয়। জন্মের পর শিশুকে অবশ্যই বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। প্রথম ছয় মাস শিশু শুধু বুকের দুধ খাবে। এ ছাড়া শিশুর মুখে অন্য কিছু দেওয়া উচিত নয়। বাহ্যিক খাদ্য গ্রহণের ফলে পাকস্থলীতে সংক্রমণ হতে পারে, এরপর হজমের সমস্যা হতে পারে। সংক্রমণ এমনকি রক্তে ছড়িয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া শিশুর মুখে চুষা ও স্তনের বোঁটা দেওয়া যাবে না।

বার উত্থাপন

শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর পর অবশ্যই বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। শিশুকে সোজা রাখুন এবং ধীরে ধীরে কম্বলটি তুলুন। অন্যথায়, সে যা খাবে তা ফেলে দেবে।

নবজাতকের নাভির যত্ন

জন্মের পর প্রথমবার নাভি কাটার পর, শুকানোর ওষুধ দেওয়া হয়, তারপর নাভির নাড়িতে কোনো ধরনের মলম লাগানো যাবে না। অন্য কিছু নাভিতে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

নবজাতকের ত্বকের যত্ন

জন্মের পর প্রথম ২৮ দিন বা ৪ সপ্তাহ শিশুর ত্বকে বাড়তি কিছু ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই বলে জানান ডা. নিশাত যদি লোশন বা অন্য কিছু ব্যবহার করতে হয়, বাচ্চা এক মাস হওয়ার পর।

কিছু শিশুর খুব শুষ্ক, খসখসে বা ফাটা ত্বক থাকে। যেসব শিশু মায়ের পেটে বেশিক্ষণ থাকে এবং মায়ের পেটে পানি কম থাকে, তাদের জন্মের পর ত্বক খুব ফাটা থাকলে খুব কম অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। শিশুদের ত্বক এমনিতেই অনেক কোমল, কোনো প্রসাধনী ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই।

নবজাতকের পোশাক

নবজাতকের কাপড় পরিষ্কার, জীবাণুমুক্ত এবং নরম হওয়া উচিত। প্রতিটি ব্যবহারের পরে ভালভাবে ধুয়ে ফেলুন। নতুন কাপড় ব্যবহারের আগে ধুয়ে ফেলতে হবে। শিশুর জামাকাপড় সুতির হতে হবে, সিন্থেটিক কিছুই ব্যবহার করা যাবে না। কৃত্রিম কাপড় শিশুর শরীরে জ্বালাতন করতে পারে। নবজাতকের এমন পোশাক পরিধান করা এড়িয়ে চলা উচিত যা ছিঁড়ে যেতে পারে বা ঝুঁকির কারণ হতে পারে।

শীতকালে নবজাতকের যত্ন

ডাঃ নিশাত বলেন, মায়ের পেটে শিশুটি গরম পরিবেশে থাকে, তাই নবজাতক শিশু জন্মের পর বাইরের পরিবেশে সহজেই ঠান্ডা হয়ে যায়। তাই শিশুর সবসময় মাথায় টুপি এবং পায়ে মোজা পরা উচিত। তবে শিশুর শরীরে খুব বেশি কাপড় দেওয়া যাবে না। বেশি জামাকাপড় রাখলে বাচ্চা ঘামবে। এতে কাশি হতে পারে।

ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার

ডাঃ নিশাত বলেন, শিশু যদি সময়ের আগেই জন্ম নেয় এবং কম ওজনের হয় তাহলে সেই শিশুর প্রতি আরও যত্ন নিতে হবে। সময়ের আগে জন্ম নেওয়া এবং কম ওজনের শিশুদের ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ারে রাখা উচিত।

বাচ্চার ওজন কম হলে, বাচ্চার ওজন ২.৫ কেজি না হওয়া পর্যন্ত ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার দিতে হবে। আর যদি সময়ের আগে শিশুর জন্ম হয়, তাহলে শিশুর বয়স ৪০ সপ্তাহ, অর্থাৎ মায়ের গর্ভে ৪০ সপ্তাহ, শিশুর জন্ম ৩২ সপ্তাহ হলে, শিশুটিকে আরও ৮ সপ্তাহ ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ারে দিতে হবে। অথবা বাচ্চার ওজন 2.5 কেজি না হওয়া পর্যন্ত দিতে হবে।

সারাদিনে ২০ ঘণ্টার বেশি ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার নিশ্চিত করতে ড. নিশাত প্রতিবার শিশুকে বুকের কাছে নেওয়ার পর দুই ঘণ্টা রাখতে হবে। এই বিশেষ পদ্ধতিতে শিশুর পরিচর্যায় পরিবারের সকলকে সহযোগিতা করতে হয়।

শেষ কথা

প্রিয় বন্ধুরা আজকে আমরা নবজাতকের যত্নে কুসংস্কার - যে সব ভুলগুলো করবেন না সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছি। যদি আমাদের পোস্টটি পড়ে আপনি উপকৃত হন তাহলে অবশ্যই পোস্টটি বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন। আশা করি আজকের পোস্টটি পড়ে উপকৃত হয়েছেন এবং পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন। 

আজকের পোস্টটি ভালো লাগলে একটি সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন। কিছু বুঝতে সমস্যা হলে নিচে কমেন্ট করুন। আমরা মন্তব্যে রিপ্লে করে আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করব। (201)

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বন্ধুমহল আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url