নিপা ভাইরাস কি? নিপা ভাইরাস কেন হয়? নিপা ভাইরাসের লক্ষণ ও নিপা ভাইরাসের প্রতিকার

বন্ধুরা এতদিন আমরা বিভিন্ন রকম ভাইরাসের নাম শুনে এসেছি যার মধ্যে ছিল কোভিড 19 বা করোনা ভাইরাস এটি যেমন একটি মারাত্মক ভাইরাস যার চিকিৎসা ফলে মানুষ বেঁচে থাকে আবার অনেক সময় দেখা যায় চিকিৎসা করার ফলেও সে মারা যায় তাই তেমন একটি ভাইরাসের চেয়েও মারাত্মক ভাইরাস হলো এই নিপা  ভাইরাস। তাহলে চলুন এবার আমরা জেনে আসি যে নিপা ভাইরাস কি নিপা ভাইরাস কেন হয় এবং নিপা ভাইরাসের লক্ষণ ও নিপা ভাইরাসের প্রতিকার তাই আজকে এই মারাত্মক ভাইরাসটির বিশেষ তথ্য আপনাদের নিতে হলে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন কোন জায়গায় স্কিপ করবেন না না হলে বুঝতে পারবেন না।

নিপা ভাইরাস কি

সূচিপত্রটি এক নজরে দেখে নিন

নিপা ভাইরাস হলো এমন একটি মারাত্মক ভাইরাস যার শেষ পরিণতি মৃত্যু এর কোন প্রতিষেধক এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি তাহলে আর দেরি না করে চলুন নিপা ভারত সম্পর্কে জানা যাক।

নিপা ভাইরাস কি

নিপা  ভাইরাস হল বাদুড়ের মাধ্যমে ছড়া এক ধরনের রোগ যা বলা হয় বাঁদুড়বাহিত ভাইরাস। এটি হলো কোভিড 19 করোনা ভাইরাসের চেয়েও মারাত্মক এবং মৃত্যু ঝুঁকি সম্পন্ন। নিপা ভাইরাস হওয়ার জন্য বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে যে লক্ষণ গুলো একমাত্র রোগের দেহে প্রকাশ পেলে বোঝা যায় যে সে রোগীটি নিপা ভাইরাস আক্রান্ত এবং। নিপা ভাইরাসের জন্য এখনো কোনো রকমের ভ্যাকসিন বা ইনসুলিন তৈরি হয়নি শুধুমাত্র তার রোগের উপর ভিত্তি করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে তাই এই প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে যে সকল ব্যক্তি বেঁচে যায় এবং তার মধ্যে অনেকে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করে।

নিপা ভাইরাসের বৈজ্ঞানিক নাম

নিপা ভাইরাসের বৈজ্ঞানিক নাম হল ঃ Henipavirus.

নিপা ভাইরাস কেন হয়

নিপা ভাইরাস হলো এক ধরনের বাদুর বাহিত রোগ যেহেতু বিশেষজ্ঞদের মতে বলা হয়েছে যে যেসব অঞ্চলে অত্যাধিক বাদুর রয়েছে বা খেজুরের গাছে অনেক সময় বাঁদর ঝুলন্ত অবস্থায় থেকে থাকে এবং অনেক ব্যক্তি রয়েছেন যারা নেশাদ্রব্য সেবন করে থাকেন সেই সকল নেশাদ্রব্যের ভিতরে পরে যেগুলো সেগুলো হল তাল গাছের মিষ্টি কাঁচা রস এবং খেজুর গাছের মিষ্টি কাঁচা রস। তাই এই সকল কাঁচা রস গাছগুলোতে খোলা অবস্থায় থাকে এবং এই কাঁচা রস যখন মানুষজন খেয়ে থাকে তখন সেই সকল রসের মধ্যে বাদুরের মলমুত্র পড়ে যায় এবং সেগুলো যখন আপনি ওপর থেকে দেখার পরেও তুলে ফেলেন এবং সেগুলো খেয়ে থাকেন তখন সেই তারিতে বা রসে যে সকল জীবানু থেকে থাকে সেই সকল জীবনও নিষ্কাশন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না তাই এই জীবাণু আপনার দেহের মধ্যে ছড়িয়ে গিয়ে নিপা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটায়।

নিপা ভাইরাসের লক্ষণ ও উপসর্গ-নিপা ভাইরাসের লক্ষণ ও উপসর্গগুলো কি কি?

নিপা ভাইরাস হল এমন একটি মৃত্যু বাহিত রোগ যে সকল ব্যক্তি এ নিপা ভাইরাস রোগে আক্রান্ত হয়েছেন সে সকল ব্যক্তির মধ্যে খুব কমই জীবিত রয়েছেন এবং তার মধ্যে অনেকজনই মৃত্যুবরণ করেছেন কেননা আমরা পূর্বেই বলেছি যে এখনো এই নিপা ভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরি হয়নি শুধুমাত্র এর লক্ষণ উপসর্গ দেখে চিকিৎসা করা হয়। তাহলে চলুন এবার নিপা ভাইরাসের লক্ষণগুলো কি কি জেনে নেওয়া যাক নিপা ভাইরাস রোগের উপসর্গগুলো ৩ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে প্রকাশ পেয়ে থাকে।

    নিপা ভাইরাসের লক্ষন ও উপসর্গগুলো হলোঃ

  • জ্বর 
  • মাথাব্যথা  
  • মাথা ঘোরা ভাব 
  • গলা ব্যথা 
  • বমি 
  • অতিরিক্ত তৃষ্ণা লাগা 
  • বেহুশ হয়ে পড়া এবং  
  • প্রলাপ বকা 
  • খিঁচুনি 
  • কোন কোন ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট।

নিপা ভাইরাসের প্রতিকার-ও নিপা ভাইরাসের চিকিৎসা

বন্ধুরা এতক্ষণ আমরা উপরের দিকে নিপা ভাইরাস রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ এবং নিপা ভাইরাস কেন হয় বিস্তারিত আলোচনা করেছি এখন আমরা আপনাদের সামনে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি সেটা হল নিপা ভাইরাসের প্রতিকার বা নিপা ভাইরাসের চিকিৎসা চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।

বাংলাদেশে নিপা ভাইরাস ছড়ায় বাঁদুড়ের মাধ্যমে। সাধারণত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে সাধারণত এই নিপা ভাইরাস রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায় কেননা এই সময় শীতকালীন সময়ের রস চাষীরা খেজুরের গাছে বাধা রস সংগ্রহ করে থাকেন এবং সেই রসে যে হাড়িগুলো ব্যবহার করা হয় সে হাড়িগুলো গাছে উন্মুক্ত অবস্থায় রাখা হয় এবং সেখানে বাদুর রস খেতে গিয়ে তার মুখের লালা ও মলমুত্র ওই হাড়ির মধ্যে পড়ে গিয়ে যে জীবানু ছড়ায় সেগুলো মানুষের দেহে প্রবেশ করে এই নিপা ভাইরাস এর সৃষ্টি হয়।

নিপা ভাইরাসের প্রতিকারগুলো হলোঃ

  • খেজুরের কাঁচা রস বা তাড়ি না খাওয়া
  • খেজুরের কাঁচা রস টগবগিয়ে না ফুঁটিয়ে পিঠা বা অন্য কিছু না খাওয়া।
  • অর্ধেক খাওয়া ফল না খাওয়া বরং এই ধরনের ফল খেলে নিপাহ ভাইরাস ছড়াতে পারে।
  • যেকোনো ফল ধুয়ে খাওয়া।
  • নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত এলাকা এড়িয়ে চলা এবং নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংশপর্শে না আর এলেও ভালোভাবে সাবান দিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়া।এ লক্ষন সমূহ দেখা দিলে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করা এবং চিকিৎসা গ্রহন করা। 

নিপা ভাইরাসের আবিষ্কারক কে-প্রথম কোথায় নিপাহ ভাইরাস পাওয়া যায়

১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়ায় সর্বপ্রথম এ নিপা ভাইরাস সনাক্ত করা হয় এ ভাইরাসটি শুধু মানুষের নয় বরং সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে তবে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে যে সমস্ত চাষীরা শূকরের খামারে কাজ করতো তাদের মাধ্যমে প্রথম ছড়িয়ে ছিল কেননা আক্রান্ত শূকরের স্পর্শ তাদের মুখে লালা ও এই ভাইরাসের সংক্রমিত মানুষের মাধ্যমে এভাবে বিস্তার ঘটে পরবর্তীতে এই রোগটি মানুষ থেকে মানুষের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাই আমরা বলতে পারি যে এই নিপা ভাইরাস সর্বপ্রথম শনাক্ত হয় বা প্রথম নিপা ভাইরাস পাওয়া যায় মালয়েশিয়াতে।

বাংলাদেশ নিপা ভাইরাস

১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়া যখন সর্বপ্রথম এ নিপা ভাইরাস সনাক্ত করা হয় তারপরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে এবং এই ভাইরাসটি বাংলাদেশে ২০০১ সালে সর্বপ্রথম মেহেরপুর জেলাতে এক ব্যক্তির দেহে এই ভাইরাস সনাক্ত করা হয়। বর্তমানে শুধু বাংলাদেশ এই নিপা ভাইরাস মেহেরপুর জেলা দিয়ে নয় বরং গোটা বাংলাদেশে প্রায় ৩২৬ জনকে সনাক্ত করা হয় যাদের মধ্যে ২৩১ জন ব্যক্তি মারা যান। তাই এ রোগ থেকে বাঁচতে হলে আপনাদেরকে উপরে দেওয়া সচেতনতা বলি বা উপসঙ্গগুলো এবং নিপা ভাইরাসের প্রতিকার গুলো মেনে চলতে হবে।

নিপা ভাইরাসের বাহক কে

নিপা ভাইরাসের বাহক হলো বাদুড়। নিপা ভাইরাস এই বাদুড়ের মাধ্যমে ছড়ায় সাধারণত যেসব চাষিরা তালের কাছে বা খেজুর গাছে রস নেয়ার জন্য যে আহারে উন্মুক্ত অবস্থায় রাখে সে হাঁড়িতে বাদুড় তার মুখের লালা এবং মল মূত্র সেখানে ত্যাগ করে এবং সে ত্যাগ করা অংশগুলি সেই রসে মিশ্রিত হয়ে মানবদেহে যখন ছড়িয়ে পড়ে তখন এই আক্রান্ত হয় এবং এনি 100 ভাগের মধ্যে 70 ভাগ ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে থাকে কেননা এখন পর্যন্ত এই নিপা ভাইরাসের প্রতিষেধক প্রস্তুত করা হয়নি বরং এর উপসর্গগুলি মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা করা হয়।

নিপা ভাইরাস কিভাবে ছড়ায়

নিপা ভাইরাস হল একটি এমার্জিং জোনোটিক ভাইরাস যা পশু পাখি থেকে মানবদেহে বা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে এ ভাইরাসটি মানবদেহের মস্তিষ্ক এবং শ্বাসনালীর শাসনতন্ত্রের প্রবাহ তৈরির মাধ্যমে মারাত্মক অসুস্থতার সৃষ্টি করিয়া দেয়। এবং এই নিপা ভাইরাসের এনসেফ্যালাইটিস নামক মস্তিষ্কের প্রধানিত রোগের সৃষ্টি হয়। তাই আমরা বলতে পারি যে নিপা ভাইরাস পশুপাখি মাধ্যমে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। এবং এটি হলো একটি সংস্পর্শী রোগ। তাই কোন পশু পাখি বা মানুষজনকে যদি আপনারা হাতের ছোঁয়া দেন তাহলে পরবর্তীতে আপনাদের হাতগুলি ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধৌত করে নিবেন।

উপসংহারঃ নিপা ভাইরাসের লক্ষণ ও নিপা ভাইরাসের প্রতিকার-নিপা ভাইরাস কিভাবে ছড়ায় 

নিপা ভাইরাস কি, নিপা ভাইরাসের বৈজ্ঞানিক নাম, নিপা ভাইরাস কেন হয়, নিপা ভাইরাস কিভাবে ছড়ায়, নিপা ভাইরাসের লক্ষণ ও উপসর্গ, নিপা ভাইরাস এর চিকিৎসা, নিপা ভাইরাসের প্রতিকার, নিপা ভাইরাসের বাহক কে, নিপা ভাইরাসের আবিষ্কারক কে, প্রথম কোথায় নিপা ভাইরাস পাওয়া যায় ইত্যাদি। বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি এমন আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন এবং এতক্ষণ আমাদের ওয়েবসাইটের সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ। 202

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বন্ধুমহল আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url