ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত

 

ডেঙ্গু জ্বর হয় মূলত এডিস মশার কামড়ে। ডেঙ্গু জ্বর একটি ভাইরাসজনিত রোগ। তাই এই ডেঙ্গু রোগ থেকে আমাদের বাঁচতে হলে আমাদের বাড়ির আশেপাশের যেমন ফুলের টপ, ডাবের খুলি ইত্যাদি এগুলোতে বেশি দিন ধরে পানি জমিয়ে রাখা যাবেনা কেননা এখানে এডিস মশার জন্ম হয়। আর সেই এডিস মশার কামড়ে আমাদের ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে ডেঙ্গু জ্বর থেকে মুক্তি পেতে হলে আপনাকে এই পোস্ট টি মনোযোগ সহকারে পড়তে হয়। এবার চলুন তাহলে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

ডেঙ্গু জ্বরের


পোস্ট সূচিপত্রঃ  এক নজরে দেখে নিন

ডেঙ্গু জ্বর-ডেঙ্গু জ্বর কি

ডেঙ্গু জ্বর হলো এডিস মশা বাহিত একটি সংক্রামক রোগ। এই রোগটি সাধারণত এডিস মশার কামড়ে হয়ে থাকে এই রোগটি তখনই ঘটে যখন একটি সংক্রমিত ব্যক্তিকে এডিস মশা কামড় দেয় এবং ভাইরাস বহন করায় এবং তারপরে সেই ব্যক্তির থেকে অসংক্রমিত ব্যক্তিকে যখন কামড় দেয় তখন এ রোগের বিস্তার ঘটে সেই ব্যক্তি ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়।

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণঃ 

ডেঙ্গু রোগের প্রধান লক্ষণ হলো জ্বর। এবং শরীরের তাপমাত্রা যদি 99 থেকে 106 ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠে যেতে পারে এবং একটানা জ্বর থাকে, আবার শরীরের মধ্যে থেকে নিঃসৃত ঘাম দিয়ে বের হয়ে যাবার পরেও আবার আসতে পারে এবং সেইসঙ্গে আমাদের শরীরের ব্যথা, মাথাব্যথা, হালকা হালকা চোখের ব্যথা অনুভূত হওয়া এবং শরীরের চামড়ায় লালচে বর্ণের দাগ বা ফুসকুড়ি দেখা দেয় ।

আরো পড়ুনঃ ঠান্ডায় সর্দি জ্বর থেকে মুক্তি পাওয়ার ঘরোয়া উপায়

মানুষ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হলে সাধারণত ৮-১০ দিনের মধ্যেই সেরে যায়। কোন চিকিৎসা না করালেও এই রোগ আপনাআপনি সেরে যায়। তবে আপনাকে বেশিরভাগ সময় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঔষধ সেবন করাই উচিত। 

যেন ডেঙ্গু জনিত মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ তার সম্মুখিন না হতে হয়। সাধারণত ডেঙ্গু রোগটি লক্ষণ দেখেই চিকিৎসা নেয়া হয়। 

ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের করণীয়।ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় কী

ডেঙ্গু একটি ভাইরাস জনিত রোগ যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এই মশা সাধারণত ভোরবেলা সন্ধ্যার সময় কামড় দেয়। সাধারণ চিকিৎসাতেই ডেঙ্গু জ্বর সেরে যায়। আবার বিশেষ করে বর্ষাকালে এ রোগের প্রকোপ বেশি থাকে এডিস মশার বংশ বৃদ্ধি বিস্তারের মাধ্যমে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা যায় তাহলে চলুন ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের করণীয় কি সে বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে আসি।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের করণীয় বিষয়গুলোঃ

  • আপনার বাড়ির আশেপাশে কোন জায়গায় যদি বাঁশ ঝাড় থাকে এবং সেখান প্রচুর পরিমাণে জঙ্গল থাকে তাহলে আপনাকে সেগুলো কেটে ফেলতে হবে।
  • আপনার বাড়ির ছাদে ফুলের টব প্লাস্টিকের পাত্র পরিত্যক্ত টায়ার বালতি টিনের কৌটা ডাবের খোসা ইত্যাদির মধ্যে জমে থাকা দীর্ঘদিনের পানি ফেলে দিতে হবে কেননা এ থেকে এডিস মশার জন্ম হয়।
  • আপনার ব্যবহৃত পাত্রটিতে মশার ডিম অপসারণের ক্ষেত্রে আপনাকে পাত্রটি ঘষে ঘষে পরিষ্কার করতে হবে।
  • দিনে অথবা রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারী বা মসকিউটো বা কয়েল বা লোশন/ক্রিম ব্যবহার করতে হবে।
  • বাড়ির ছাদে অনেকে ফুলের বাগান তৈরি করেন সেখানে অনেকসময় দেখা যায় যে ফুলের টবে পানি জমে থাকে তো সেই পানিগুলো 5 দিনের বেশি জমিয়ে রাখা যাবে না কেননা সেখানে এডিস মশার লার্ভা তৈরি হয়।
  • আপনাকে ডেঙ্গু রোগ থেকে বাঁচতে হলে হাফ প্যান্ট বা হাফ হাতা গেঞ্জি ইত্যাদি আপনাকে ব্যবহার করা যাবে না আপনাকে ফুল প্যান্ট ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে যেন আপনার শরীরের কোন অংশ বের হয়ে না থাকে।

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে-ডেঙ্গু রোগের খাবার

আমরা অনেকেই জানি না যে আমাদের ডেঙ্গু জ্বর হলে বা আমরা যদি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং সেই রোগ থেকে আমাদের সেরে উঠতে কোন খাবারগুলো খেতে হবে যেন আমরা দ্রুত সুস্থ হতে পারি চলুন জেনে আসি ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে।

আরো পড়ুনঃ ডায়রিয়া রোগের লক্ষণ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত

প্রথমত আমাদের প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে এবং সেই সাথে আমাদের মালটা,ডাবের পানি, কমলা লেবু, পেয়ারা, স্ট্রবেরি, পেঁপে, ডালিম ইত্যাদি আমরা খেতে পারি। এবং সবজির মধ্যে একজন ডেঙ্গু রোগীর যে সমস্ত সবজিগুলো খাওয়া উচিত তা হল গাজর,টমেটো,শসা ইত্যাদি বেশি করে খাওয়া উচিত এই সবজিগুলোতে জলীয় উপাদান বেশি থাকে। 

প্রতিদিন সবজির স্যুপ, টমেটো স্যুপ ইত্যাদি খাওয়া এবং যেকোন রান্না যুক্ত খাবারের মধ্যে অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার চর্বি বা তেলযুক্ত খাবার না খাওয়া উচিত

 ডেঙ্গু উপসর্গ

শরীরে ডেঙ্গু রোগের কিছু উপসর্গ রয়েছে এগুলো যদি কোন মানবদেহে ঘটে থাকে তাহলে বুঝতে হবে যে সেই ব্যাক্তি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত তাহলে চলুন উপসর্গগুলো কি কি জেনে আসি।

ডেঙ্গু রোগের উপসর্গগুলোঃ

  • শরীরে তীব্র জ্বর থাকবে
  • শরীরের মধ্যে লালচে বর্ণের ফুসকুড়ি দেখা দিবে
  • শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে বা মাংসপেশিতে ব্যথা করবে
  • যেমন অস্থিসন্ধি বা হাড়ের ব্যথা
  • খাবারের প্রতি অনীহা বা মন্দাভাব দেখা দেবে
  • ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তি কোষ্ঠকাঠিন্যতাই ভুগবে

ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে

ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত ১-২ সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায় কিন্তু কিছু কিছু রোগীর জন্য পরিস্থিতি অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। যদি দেখেন যে আপনার ১-২ সপ্তাহ হওয়ার পরেও আপনার ডেঙ্গু জ্বর ভাল হচ্ছেনা তাহলে আপনাকে অতিশীঘ্রই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে এবং এই পোস্টের উপরোক্ত বিষয়গুলো আপনাকে মেনে চলতে হবে তাহলেই কেবল ডেঙ্গু জ্বর থেকে মুক্তি পেতে পারে

ডেঙ্গু কি ছোঁয়াচে রোগ

বিশেষত ডেঙ্গু রোগ ছোঁয়াচে নয় এটি একটি সংক্রামক রোগ তাই এটি এক দেহ ব্যতীত অন্য দেহে ছড়ায় না। আমরা অনেকেই মনে করি যে ডেঙ্গু মনে হয় ছোঁয়াচে রোগ কোন ব্যাক্তি যদি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয় এবং আমরা যদি সেই ব্যক্তির দিয়ে হাঁটাচলা করি এবং তার ব্যবহৃত কাপড় চোপড় ইত্যাদি ব্যবহার করি তাহলে হয়তোবা আমরাও ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হতে পারি। 

আরো পড়ুনঃ বাচ্চাদের সর্দি কাশি হলে কি কি খাওয়ানো উচিত এবং কি কি উচিত নয় জেনে নিন

কিন্তু না আসলে ডেঙ্গু জ্বর ছোঁয়াচে নয় তাই আমরা নির্দ্বিধায় ডেঙ্গু রোগীর সাথে সামাজিক মেলামেশা এবং বিভিন্ন কথাবার্তা বলতে পারি তাই একজন ডেঙ্গু রোগীকে আলাদা করে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই।

ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা। ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা

  • আপনাকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে।
  • আবার আপনাকে বেশি পরিমাণে পানি, শরবত,ডাবের পানি ইত্যাদি তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।
  • আপনি যদি কোন কিছু খেতে না পারেন তাহলে আপনাকে বেশি পরিমাণে স্যালাইন গ্রহণ করতে হবে।
  • ডেঙ্গু জ্বর হলে আপনি বিশেষত প্যারাসিটামল খেতে পারেন এবং স্বাভাবিক ওজনের একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি সর্বোচ্চ অতিমাত্রায় ৭-৮টি প্যারাসিটামল খেতে পারেন। কিন্তু যদি আপনার লিভার- হার্ট বা কিডনি জনিত কোন সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আপনি প্যারাসিটামল খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন
  • ডেঙ্গু জ্বর হলে গায়ে ব্যাথার জন্য আপনাকে অ্যাসপিরিন বা ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ঔষধ সেবন করা যাবে না কেননা এতে আপনার রক্তক্ষরণ হতে পারে।
  • বিশেষ করে জ্বর কমানোর জন্য ভেজা কাপড় দিয়ে সারা শরীর মুছে নিতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে

জ্বর কমানোর জন্য অ্যাসপিরিন বা বিভিন্ন ধরনের ব্যথানাশক ঔষধ ব্যবহার করা যাবে না এতে আপনার ক্ষতি হতে পারে সুতরাং আপনি ঔষধ ছাড়াও জ্বর কমানোর জন্য রোগীকে বারবার মাথায় পানি ঢালতে পারেন। 

এবং তার সারা শরীর যদি প্রচন্ড জ্বরে আক্রান্ত হয় তাহলে তাকে কোন কাপড় পানিতে ভিজিয়ে আক্রান্ত রোগীর পুরো শরীর মুছে দিতে পারবে এবং তাৎক্ষণিক বেশি জ্বর থাকলে রোগীকে গোসল করাতে পারেন।

ডেঙ্গু রোগের ওষুধ

ডেঙ্গু রোগ হলে আপনাকে ভয় না পেয়ে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে এবং ডেঙ্গু রোগের জন্য আদৌ এমন কোন ঔষধ বের হয়নি কিন্তু আপনাকে যদি জ্বর আসে তাহলে প্যারাসিটামল খেতে পারেন কিন্তু অ্যাসপিরিন বা ব্যথানাশক ঔষধ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। 

আরো পড়ুনঃ সুস্থ থাকতে ১৫টি দেশি ফলের উপকারিতা সম্পর্কে জানুন

যদি দেখেন ডেঙ্গু রোগী উচ্চমাত্রায় জ্বর আছে তাহলে তাকে সারা দিনে 6 থেকে 8 ঘণ্টা পর পর জ্বরের মাত্রা বুঝে প্যারাসিটামল খাওয়াতে হবে এবং আপনাকে যে মাথায় রাখতে হবে যে একজন ব্যক্তির জন্য দিনে আট থেকে দশটি ট্যাবলেটের সর্বোচ্চ চার গ্রাম বেশি হলে লিভার সহ দেহের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হতে পারে।

ডেঙ্গু মশা চেনার উপায়

ডেঙ্গু হল সাধারণত রোগ বহনকারী একটি জীবাণু। তবে এটি বিস্তার লাভ করে এডিস মশার মাধ্যমে এডিস মশা কিভাবে চিনতে পারি তা হলো এডিস মশার দিকে তাকালে তার তার পায়ে এবং শরীরের পাশে ডোরাকাটা দাগ থাকে। 

এবং এডিস মশার মাথার ওপরে পেছনের দিকে তাকালেই দেখতে পাবে যে কাস্তে ধরনের সাদা দাগ রয়েছে ও বাকি মশাদের থেকে এডিস মশা সম্পূর্ণ আলাদা কেননা আরো যেসব মশা গুলো রয়েছে সেগুলো দেহের মাঝে বরাবর সাদা দাগ থাকে। মূলত আমরা এই বিষয়গুলো দেখেই চিনতে পারব যে এটি এডিস মশা।

সর্বশেষ মন্তব্য

সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ আজকে আপনাদের সামনে আমি ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আমি আশা করি আপনাদের এই পোস্টটি পড়ে অনেক ভালো লাগবে। আমার এই পোস্টটি পড়ে যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনাদের বন্ধু-বান্ধবের মাঝে শেয়ার করতে পারেন। 

এবং আমার এই পোস্টের মধ্যে যদি কোন ভুলভ্রান্তি পেয়ে থাকেন তাহলে আপনারা অবশ্যই নিজের কমেন্ট বক্সে গিয়ে আমাকে জানাবেন এবং এই পোস্ট বিষয়ক আরও বিভিন্ন ধরনের তথ্য যদি আপনার পেয়ে থাকেন তাহলে নিচের কমেন্ট বক্সে গিয়ে আমাকে জানাতে পারেন। অতএব আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমার এই পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। 



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বন্ধুমহল আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url